UI ও UX ডিজাইনার হতে হলে যে বিষয়গুলো আপনাকে জানতেই হবে।

ডিজাইন সেক্টর একটা বিশাল পরিমণ্ডল যা শুধু গ্রাফিক ডিজাইনের ভেতরেই সীমাবদ্ধ না। কেউ যদি নিজেকে শুধু ডিজাইনার বলে পরিচয় দেয় তাহলে সেক্ষেত্রে আসলে বোঝা যায় না সে কোন ডিজাইনার। কেননা, ডিজাইন সেক্টরে রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন, টেক্সটাইল ডিজাইন, ইন্টেরিয়র ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, সিরামিক ডিজাইন, প্রিন্ট ডিজাইন কিংবা UI/UX ডিজাইন। আর এই UI ডেভেলপার ও UX ডিজাইনাররা সামনের দিনগুলোতে আরও বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে এই সেক্টরে!

UI বনাম UX

UX ডিজাইনাররা যেখানে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে কাজ করেন সেখানে UI ডেভেলপাররা কাজ করেন ইন্টারফেস ডিজাইন নিয়ে। কোনো আইটি প্রোডাক্ট  ডেভেলপের ক্ষেত্রে এই সেক্টরের মানুষদের একসাথে কাজ করতে হয়। আলাদা আলাদা কাজ হওয়া সত্ত্বেও দিনশেষে এই সেক্টরের ডিজাইনাররা একে অপরের উপরে অনেকাংশেই নির্ভরশীল।

UX হচ্ছে User Experience

ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত অনেক কোম্পানির জন্য এখন পর্যন্তও UX ডিজাইন একটা নতুন ক্ষেত্র! আর অনেক কোম্পানি জানেই না এই UX ডিজাইনাররা তাদের পণ্যকে গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে কতটা সাহায্য করতে পারে! কারণ এখন পর্যন্ত অনেক মানুষ ডিজাইন সেক্টরের মানুষদের শুধু সৃজনশীলতা, রঙ, গ্রাফিক্স – এই কয়টি ট্যাগের ভেতরেই আবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু যখন কোনো পণ্যের ফাংশনালিটি, সেটার পেছনের গল্প আর শতশত গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে তখন এই UX ডিজাইনারদেরকেই সবার আগে লাগে! কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, অনেক ইন্টার্ভিউ বোর্ডে এখন পর্যন্ত UX ডিজাইনার রিক্রুটমেন্টের সময় শুধু তাদের গ্রাফিক ডিজাইনের দক্ষতাকেই মানদণ্ড হিসেবে যাচাই করা হয়!

কারা কোনো পণ্যের টার্গেট গ্রাহক, তারা কেন আপনার পণ্য কিনবে আর পণ্য কেনার পর সেই পণ্যের সাথে তাদের অভিজ্ঞতা কেমন – এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে UX ডিজাইন টিম। তারা মূলত কোনো পণ্যের ফাংশনালিটি, ইউজেবিলিটি, প্রোটোটাইপ, ইউজার অ্যাডাপ্টিবিলিটি ও সাইকোলোজি – এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। তাই UX ডিজাইনাররা সরাসরি কোনো ডিজিটাল পণ্যের ডেভেলপমেন্ট লেভেলের কাজ করেন। এজন্য UX ডিজাইনারদের দায়িত্ব বেশ জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। কোম্পানির বিজনেস গোল ও পণ্যের সাথে গ্রাহকদের ভালো অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

UX ডিজাইনাররা যা যা করেন

  • কম্পেটিটর ও কাস্টোমার অ্যানালাইসিস
  • প্রোডাক্ট স্ট্রাকচার
  • কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট
  • ওয়্যার ফ্রেমিং ও প্রোটোটাইপিং
  • টেস্টিং ও ইটারেশন
  • UI ডিজাইনার ও ডেভেলপারদের সাথে সহযোগিতা

 

১। কম্পেটিটর ও কাস্টোমার অ্যানালাইসিসঃ

কম্পেটিটর ও কাস্টোমার অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে কোনো কোম্পানির মার্কেট, প্রোডাক্ট ও টার্গেট গোল সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। আর এটাও সত্য যেখানে বাজার ভালো সেখানে প্রচুর প্রতিযোগীও থাকবে। গ্রাহকরা কেন অন্যদের প্রোডাক্ট না কিনে আপনার পণ্য কিনবে – এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করে UX ডিজাইনাররা। আর এই কাজের জন্য তাদের অন্যান্য কোম্পানির বিজনেস স্ট্র্যাটেজি, পণ্যের গুণগতমান পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হয়। অন্যদিকে গ্রাহক হচ্ছে কোনো একটি ব্যবসার প্রাণ। কোনো পণ্য কেনার পর তাদের অভিজ্ঞতা কেমন বা তাদের চাওয়া পাওয়া কি এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন তারা। আর এভাবেই তারা তাদের গ্রাহকদের জন্য আলাদা ও চমৎকার ইউজার ইন্টারফেস হাজির করতে সক্ষম হন।

 

২। কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্টঃ 

শুধু ইন্টারফেস ডিজাইনের দিকে নজর দিলেই সেটা গ্রাহকদের মন কাড়বে তা নয়। কারণ কোনো পণ্যের ইউজার ইন্টারফেসের পাশাপাশি কন্টেন্টও গ্রাহকদের কাছে বেশ গুরুত্ব লাভ করে। উন্নতমানের কন্টেন্ট যথার্থভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের নজর কাড়া সম্ভব। আর এই বিষয়ের দিকে নজর রেখে UI ডিজাইনাররা কাজ করে থাকেন।

৩। ওয়্যার ফ্রেমিং ও প্রোটোটাইপিংঃ

অনেক ডিজাইনারই ওয়্যার ফ্রেমিং ও প্রোটোটাইপিং এই টার্ম দুটিকে একই ভেবে ভুল করে বসেন। ওয়্যার ফ্রেমিং এর মাধ্যমে মূলত নিচের কাজ করা হয়ঃ

  • মূল তথ্যগুলো উপস্থাপন করা
  • ডিজাইনের একটা স্ট্রাকচার ও আউটলাইন তৈরি করা
  • ইউজার ইন্টারফেসের বিশদ বিবরণ

অপরদিকে প্রোটোটাইপিং টার্মটি ওয়্যার ফ্রেমিং বা ইন্টারফ্রেমিং এর থেকে বেশ বড় একটি কনসেপ্ট। এটি হাই ফিডেলিটি প্রোটোটাইপ ও ফাইনাল ইউজার ইন্টারফেস নিয়ে কাজ করে।

৪। টেস্টিং ও ইটারেশনঃ

কোনো প্রোডাক্ট বাজারে লঞ্চ করার পূর্বে সেটাকে বিভিন্ন পর্যায়ে ও বারবার টেস্টিং এর মাধ্যমে সেটার ইউজেবিলিটি পরিক্ষা করার মাধ্যমে টেস্টিং ও ইটারেশন সম্পন্ন হয়। UX ডিজাইনারদের জন্য টেস্টিং ও ইটারেশন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
 
 
৫। ডেভেলপারদের সাথে সহযোগিতাঃ

একজন ডেভেলপার কোনো UX ডিজাইনার ছাড়া কোনো ওয়্যারফ্রেম, ডিজাইন বা প্রোটোটাইপ কল্পনা করতে পারেন না। অপরদিকে একজন ডেভেলপার ছাড়া কোনো UX ডিজাইনার তার কাজের কোনো বাস্তব রুপ দেখতে পারেন না। কাজেই এই দুই সেক্টরের মানুষকে বেশ সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে একসাথে কাজ করতে হয়।

UI হচ্ছে User Interface

একটি পরিপূর্ণ UI ডিজাইন করা বেশ চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ যা UI ডিজাইনাররা করে থাকেন। যেমনঃ Apple ও Samsung ফোনের মধ্যে তুলনা করলে অনেক ব্যবহারকারীই Apple কে প্রাধান্য দিবেন। কিন্তু প্রোডাক্ট হিসেবে এই দুটি প্রোডাক্টের অভিজ্ঞতা প্রায় একই। কিন্তু তারপরেও কেন মানুষ Samsung এর থেকেও Apple কে গুরুত্ব দেয়? এককথায় বলতে গেলে এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, Samsung এর তুলনায় Apple এর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স যথেষ্ট ভালো ও উন্নতমানের। অনেকে আবার বলতে পারে, এই দুই ব্র্যান্ডের থেকে একইরকম সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও Apple কিভাবে Samsung এর থেকে এগিয়ে গেলো! আর হ্যাঁ, এখানেই Apple এর UI ডিজাইনারদের সাফল্য! তারা তাদের পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের যে ভালো অনুভূতি দিতে পেরেছে সেটা Samsung এর ডেভেলপাররা দিতে পারেননি!

 

UI ডিজাইনাররা যা যা করেন

  • ডিজাইন রিসার্চ
  • ব্র্যান্ডিং ও গ্রাফিক ডেভেলপমেন্ট
  • ইউজার গাইড ও স্টোরিলাইন
  • অ্যানিমেশন ও ডিভাইস স্ক্রিন

১। ডিজাইন রিসার্চঃ

ডিজাইন রিসার্চকে কোনো ডিজাইনের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ধরা হয়। এর মাধ্যমে ডিজাইনের মূল তথ্য ও রিসার্চ এর সাথে ডিজাইন প্র্যাক্টিসের সামঞ্জস্যতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
 

২। ব্র্যান্ডিং ও গ্রাফিক ডেভেলপমেন্টঃ

গ্রাহকদের কাছে পণ্যের সকল তথ্য পৌঁছিয়ে দিতে ব্র্যান্ডিং অদ্বিতীয়। আপনি আপনার পণ্যের ব্র্যান্ডিং এর জন্য যত অর্থ ব্যয় করবেন তত আপনার পণ্যের প্রসার ঘটবে। কোনো পণ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে সেটি কতটা যথার্থভাবে হচ্ছে সেদিকে নজর রাখে UI ডিজাইনাররা। আর এই ব্র্যান্ডিং নিচের ভিজ্যুয়াল জিনিসগুলোর উপর নির্ভর করে।

  • লোগো
  • ব্র্যান্ড কালার
  • টাইপোগ্রাফি
  • গ্রাফিক ইলিমেন্টস (যেমনঃ ইলাস্ট্রেশন, লেটারহেডের ডিজাইন, বিজনেস কার্ড, প্রিন্ট অ্যাসেট, টেমপ্লেট প্রভৃতি)

৩। ইউজার গাইড ও স্টোরিলাইনঃ

সেলফ সার্ভিস ওয়েব বেজড গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের জন্য ইউজার গাইড ও স্টোরিলাইন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। অ্যাডমিনিস্ট্রেটর থেকে শুরু করে ডিজাইনার ও এন্ড-ইউজারদের সকল ধরণের ফাংশন অ্যাক্সেস করার দায়িত্ব পালন করে এটি। অ্যাডমিন ভিউ, ক্যাটালগ ভিউ, ডিজাইনার ভিউ, ক্লাউড অ্যাপস প্রভৃতি এই সেকশনের অন্তর্ভুক্ত। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে এই সব ভিউ সকল ইউজারদের ব্যবহারের জন্য অ্যাকসেস দেয় না। UI ডিজাইনাররা তাই ইউজার গাইড ও স্টোরিলাইন ডিজাইনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 
৪। অ্যানিমেশন ও ডিভাইস স্ক্রিনঃ

এখনকার দিনে স্মার্টফোন ছাড়া যেন আমাদের চলেই না! স্মার্টফোনের বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলেছে। একজন UI ডিজাইনারকেও তাই ইউজারের চাওয়া পাওয়ার প্রতি সম্মান রেখে সেটার অ্যানিমেশন ও ডিভাইস স্ক্রিন নিয়ে কাজ করতে হয়। তারা বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের ফাংশনালিটির দিকে নজর রেখে সেটার ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন।

ডিজাইন সেক্টরে UI কিংবা UX ডিজাইনার – এই দুইই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তথ্যসূত্রঃ

https://theblog.adobe.com

https://uxplanet.org

https://community.articulate.com